একজন ডাক্তার সমাজের অনেক সম্মানী ব্যক্তি । আমাদের সমাজের অধিকাংশ বাবা-মা দের বা ছাত্র-ছাত্রী দের ই এই স্বপ্ন থাকে যে বড় হয়ে সে ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে, দেশের সেবা করবে। অনেক মেধা যুদ্ধ করে, অনেক পরিশ্রম করে বাবা মাকে অনেক রাত না ঘুমিয়ে, নিজে না ঘুমিয়ে যখন একজন ছেলে বা মেয়ে ডাক্তার হয় তখন ই শুরু হয় আসল সমস্যা। আমাদের সমাজের সবাই মনে করি ডাক্তার মানেই হয় কসাই নতুবা টাকার একটা মস্ত বড় একটা অ্যাকাউন্ট । আসলে এটা আমাদের অনেকের ই ভুল ধারনা। অনেকে যেমন ডাক্তার কে অতি মানবিও কিছুও ভাবি আমরা। অনেক সময় ডাক্তার রা রোগিদের কে অনেক সময় দিতে পারেনা অন্য রোগিদের চাপে যার ফলে অনেকে ডাক্তার এর উপর ও বিরক্ত হয়। এটাও আমি মনে করি ভুল ধারনা। চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আমাদের সবারই আছে। এটা আমাদের মৌলিক অধিকারেও একটা অংশ। আমরা যারা ডাক্তার হয়েছি এটুকু বলতে পারব যে আমাদের কাছে ফাস্ট প্রায়োরিটি হচ্ছে আমাদের রোগি, আমাদের পরিবার না। দেশের অনেক ডাক্তার ই আছেন যারা ঈদ এর ছুটি পর্যন্ত বিসর্জন দেয় তাদের কর্তবের জন্য । অনেকেই ভাবি টাকার জন্য হয়ত এটা করে থাকেন উনারা আসলে কথাটা তা কখনই নয়। একজন ডাক্তার কখনই একজন মুমূর্ষু রোগীকে ফেলে কোথাও জেতেই পারবেনা। আমরা টিভি সিরিয়াল এ যা দেখি বাস্তবতা কখনই এক না যে টাকার জন্য রোগী মরে যাচ্ছে আর ডাক্তার সেদিকে খেয়ালও করছেনা ।যদিও আজ আমার লেখার বিষয়টা এইগুলু বিষয়ের সাথে খুব বেশি সম্পর্ক যুক্ত নয় । আমার লেখাটার উদ্দেশ্য আসলে একটা গন সচেতনতা মুলক বলতে পারেন। আমরা সাধারন মানুষ ডাক্তারের কাছে যাই সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার জন্যই। এখানে অবশই খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদেরও নিজে সচেতন থেকে অনেক কিছু করার আছে। আমরা যারা চিকিৎসা নিতে যাই তাদের মধ্যে শতকরায় কতজন আছি যারা ডাক্তার সমন্ধে খেয়াল রাখি? যার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন উনি আদ্যও ডাক্তার কিনা,একবার ভেবেছেন?একবারও কি খবর নিয়েছেন??একবার কি জানতে চেয়েছেন উনি পাস করেছেন কিনা???
আমি বেক্তিগত ভাবে পেশায় একজন ডেন্টিস্ট । আমাদের এই পেশাতে যতজন না পাস করা ডাক্তার আছেন তার চেয়ে বরং অনেক গুন বেশিই হাতুরে নামধারী ডাক্তার আছেন এই দেশে যারা একজন পাস করা ডাক্তার এর সাথে থেকে কাজ দেখে যতটা আয়াত্ত করে কিছু ঔষধ এর নাম জেনে নিজেরাই এক সময় নামের আগে ডাক্তার বসিয়ে একটা চেম্বার পরিচালনা করে চলেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ তাদের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিনা দ্বিধায় একবারও ভাবছেন না এত টাকা খরচ করে যার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন সে কি আসলেই ডাক্তার কিনা। সে আপনার মুখ গহব্বর এর মত এতটা সংবেদনশীল জায়গায় সমন্ধে কততুকু জানে। কোথায় কোন নার্ভ আছে, কোথায় কোন রক্ত নালী আছে। কোন রুগের জন্য কোন ঔষধ কোন কাজ করতে পারে। কোন ঔষধ এর সাথে কোন ঔষধ ড্রাগ রিয়াকশন করতে পারে, কোন ড্রাগ আপনার শরীরে অ্যালার্জি এর কারন হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আমাদের ডেন্টাল এ অনেক রোগ ওই আছে যে গুলির জন্য অনেক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ঔষধ ব্যাবহার করতে হয়। উচ্চ ক্ষমতার অনেক ঔষধ এর ই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও থাকে অনেক। যদি সঠিক প্রয়ুগ জানা না থাকে। একজন ডাক্তার গোঁটা মেডিসিন সার্জারি বই মুখস্থ করে কঠিন ও জটিল রোগের উপর পড়ালেখা করে যে চিকিৎসা টা শিখে সেটা কি করে একজন নামধারি হাতুরে ডাক্তার কিছুদিন একজন ডাক্তার এর সাথে থেকে কিছু না পড়ে না জেনে সেই রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে আর আমাদের দেশের সাধারন মানুষ তা নির্ভাবনায় গ্রহন করছেন। তারা সাধারন রোগের জন্য অতি উচ্চ ক্ষমতার ঔষধ ব্যাবহার করতেছে হরহামেশায় ।যার ফলে ওই রোগ হয়ত কিছুটা ভালো হচ্ছে কিন্তু সেই সাথে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের শরীরের উপকারি হাজার হাজার ভালো কার্যকারিতা সম্পন্ন জীবাণু।যার ফলে রোগ সাময়িকের জন্য ভালো করছে ঠিকই কিন্তু রোগির দেহ কে এমন অবস্থা করে তুলছে যে পরবর্তী তে অন্য কোনো জটিল ও কঠিন রোগের জন্য এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ঔষধ ও কাজ করবেনা যেটাকে আমরা মেডিকেল এর ভাষায় “ড্রাগ রেছিছটেনছি” বলি । তখন রোগি হিসেবে নিজেকে অসহায় বোধ করা ছাড়া কিছুই করতে পারবেন না। নিজেকে তখন শুধু দোষারোপ ই করে যাবেন শুধু।এমন অনেক রোগি আমি দেখেছি এ যাবত যারা অতীত জীবনে এরকম ভুল করেছেন এবং পরে পস্তিয়েছেন । দাঁত এর চিকিৎসা এমনিতেই কিছুটা ব্যয় বহুল। আর সেই চিকিৎসাই যদি আপনার শত্রু হয়ে আপনার ই শরীরে বাসা বাধে সেটা সম্পূর্ণ রুপে আপনাকেই দোষারোপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা তখন। আমার দেখা ও জানা মতে কোন হাতুরে নামধারি ডাক্তার রা জীবাণু মুক্তকরন( ইস্টেরিলাইযার) যন্ত্র ব্যাবহার করে না।যার ফলে আপনি হেপাটাইটিস কিংবা এইডস এর মত মারাত্মক জীবননাশক রোগের আশঙ্কায় পরতে পারেন খুব সহজেই যেহেতু আমাদের সকল কাজ ওই শরীরের রক্তের সাথে সম্পর্কিত। আর এমন কিছু যন্ত্র আছে যে গুলু একবার ব্যাবহার করার কথা কিন্তু তারা টাকা বাচানোর ধান্ধায় বারবার ব্যাবহার করে। এটাও কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ আপনিই ভেবে দেখুন। আমাদের দেশে একসময় ডেন্টিস্ট তেমন ছিলনা। তখন ই এদের শিকর গজে উঠেছে এই দেশে। আমি এই বিষয়ে আমাদের আইন বিভাগ কে দোষারোপ করতে পারি যদিও। উনাদের তেমন তৎপরতা নেই এই সকল ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে।সব সম্ভবের দেশ হচ্ছে আমাদের এই দেশ। তাই সচেতন যতটা হতে হবে তা আমাদের কেই হতে হবে। নিজে সচেতন হলে কেউ আমাদের অন্তত ঝুকির মধ্যে ফেলতে পারবেনা বলে আমি মনে করি। এখন সঠিক ডাক্তার চিনবেন কেমনে? আপনি আপনার শরীরের মূল্যবান একটা অঙ্গ একজনের কাছে চিকিৎসার জন্য যখন দেবেন তখন খেয়াল রাখবেন যে এ থেকে কতোটা ভালো বা খারাপ হতে পারে। আমাদের সকল এম.বি.বি.এস বা বি.ডি.এস দের কেই সরকারি ভাবে বি.এম.ডি.সি থেকে একটা সনদ দেয়া হয় যার মধ্যে একটা রেজিস্ট্রেশান নাম্বার থাকে। এটাই প্রমান করবে ডাক্তার আসল না নকল। তাই আমার উপদেশ থাকবে আপনার মূল্যবান জীবনের প্রতি অবহেলা করবেন না। একটা ছোট ভুল ই হতে পারে আপনার জীবনের জন্য হুমকি। আপনার পরিবার এর জন্য কান্না।
No comments:
Post a Comment